বাংলাদেশের অনেক নাগরিকেরই এখন সময় কাটে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ প্রকাশের বিনোদনমূলক মিডিয়া জি বাংলা, স্টারপ্লাস ও স্টার জলসায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এসব চ্যানেলের প্রধান ভোক্তা হয়ে উঠেছে। এসব চ্যানেল বন্ধে হাইকোর্ট রুলও দিয়েছে। তবু কমছে না দাপট। এর জন্য দেশের সরকারের নীরবতা ও অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
গত বছর একটি ভারতীয় সিরিয়ালের ধারাবাহিকের নায়িকার নাম অবলম্বনে ‘পাখি জামা’ না পেয়ে কয়েক স্থানে কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এবারের ঈদেও এসেছে ‘কিরণমালা জামা’। সিরিয়ালের এসব নায়িকাদের নামে জামা বাজারে এনে শিশু-কিশোরদের ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির জগতে টেনে নেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
তারা বলেন, কিশোরী যখন জানছে এমন একটা পোশাক এবার ফ্যাশন, তখন সেটা সে না পেলে ব্যর্থ জীবন মনে করছে। এই মনে করাটাও টেলিভিশনের এসব সিরিয়াল নির্ভর বিনোদনের প্রভাব। ধারবাহিকগুলোর গল্পে যা দেখানো হয় তার সাথে বাস্তবের মিল নেই। ফলে ওই জগতেই বাস করে দর্শকেরাও।
জামার পর বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে স্টার জলসা সিনেমা চ্যানেলে দেখানো নানা সিরিয়ালের নামে খাতা। মিরপুর, মোহম্মদপুরের বেশ কয়েকটি দোকানে এধরনের খাতা দেখা গেছে। কিরণমালা, জল-নুপুর, বোঝে না সে বোঝে না ইত্যাদি সিরিয়ালসহ প্রায় সব কয়টি ধারাবাহিকের ছবিওয়ালা এসব খাতা সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা বেশি কিনে থাকে।
বিক্রেতারা বলেন, এসব খাতার চাহিদা আছে। বাসায় লেখার জন্য তারা এসব ধারাবাহিকের ছবিসহ খাতা কিনে দিতে জিদ করে।
খাতা কিনতে আসা প্রিপারেটরি স্কুলের এক অভিভাবক আনিসা বলেন, এধরনের খাতা দেখলে বাচ্চা কিনতে চায়। তাদের কাছে এর মলাট চেনা লাগে বলে কিনতে চায় মনে হয়।
তিনি মনে করেন, জামা কিংবা খাতার মলাটে এধরনের প্রলোভন দেখিয়ে যেন কেউ ব্যবসা না করে সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখা দরকার। তিনি এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকা দরকার মনে করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেলের (স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা) সম্প্রচার বন্ধে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এখনও এর জবাব দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারক আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, ডিজি জাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটের আবেদনকারী এখলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের নামে পোশাক কিনতে না পেরে বাংলাদেশে অনেকে আত্মহত্যা করেছে। এসবের পর এই তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে লিগ্যাল নোটিসও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এই চ্যানেল তিনটির সম্প্রচার বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা জোর করে বন্ধের পক্ষে না। কিন্তু যখন আপনার সমাজে কোনো শক্তিশালী প্রটেক্টর নেই, তখন যদি এধরনের প্রলোভনের কারণে শিশু-কিশোররা ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন কিছু সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। ভারতীয় ধারাবাহিকগুলোর কোনো নাম ব্যবহার করে পোশাক, খেলনা, খাতা ব্যবহার করার যাবে না এমন সিদ্ধান্তে আসাটাও জরুরি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন